আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৫/১২/২০২৩ ১০:১০ এএম
মিয়ানমারের শান রাজ্যে একটি সামরিক ঘাঁটি দখল করে নিজেদের পতাকা ওড়ায় ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স। ছবি : ইরাবতী

অক্টোবর মাসের শেষের দিক থেকেই অস্বস্তি হচ্ছিল সাই লামের। চীনের সীমান্তবর্তী তাঁর গ্রামের কাছে মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলীয় শান রাজ্যের জাতিগত সশস্ত্র সংগঠন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মির (এমএনডিএএ) সদস্যরা জড়ো হচ্ছিলেন। একটি সংঘাত শুরু হতে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছিল সাই লামের। কয়েক দিন আগেই ২৭ বছর বয়সী এই যুবক চীনের ইউনান প্রদেশে চাকরি পেয়েছিলেন।

যুদ্ধের শঙ্কায় নিজের পরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়ে চীনে পাড়ি জমান তিনি। তবে তাঁর মা, স্ত্রী ও নবজাতক সন্তান চীনেই রয়ে যায়।
কয়েক দিন পরই এমএনডিএএ, আরাকান আর্মি (এএ) ও তায়াং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মির (টিএনএলএ) সমন্বয়ে গঠিত সামরিক জোট থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স শান রাজ্যের সামরিক ঘাঁটিগুলোতে অপারেশন ১০২৭ নামে যৌথ অভিযান শুরু করে। ওই সময় সাই লামের পরিবার বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়েছিল।

১০ দিন পর এমএনডিএএ আশপাশের কয়েকটি গ্রাম দখল করে নিলে সাই লামের পরিবার বাড়ি ফিরে আসে। সাই লামের গ্রামের পরিস্থিতি এখন শান্ত। তবে হারানো জায়গায় দখল ফিরে পেতে জান্তা আশপাশের এলাকায় লাগাতার আক্রমণ শুরু করেছে। এমনকি বোমা হামলাও চালাচ্ছে জান্তা বাহিনী।

যেকোনো সময় নিজের গ্রামে হামলার শঙ্কায় সাই লাম তাঁর পরিবারকে চীনে নিয়ে আসার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সংঘাতের কারণে পালানোর মতো পরিস্থিতি সেখানে নেই।
২০২১ সালে সেনা অভ্যুত্থানের পর এই প্রথম সমগ্র মিয়ানমারে এত সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, অভ্যুত্থানের পর সেনাবাহিনী সবচেয়ে দুর্বল অবস্থানে রয়েছে। এমনকি অনেক বিশ্লেষকের মতে, সেনাবাহিনী পতনের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে।

তবে এসব সংঘাতের মূল্য হিসেবে ভয়াবহ মানবিক সংকটের মুখোমুখি হয়েছে মিয়ানমার। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২৬ অক্টোবর থেকে ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত মিয়ানমারের পাঁচ লাখ ৭৮ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে প্রাণ হারিয়েছে ৩৬৩ জন বেসামরিক নাগরিক। এ ছাড়া ৪৬১ জন বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছে।

অপারেশন ১০২৭ শুরুর আগেও মিয়ানমার নজিরবিহীন সশস্ত্র সংঘাত ও মানবিক সংকটের মুখোমুখি হয়েছে। জাতিসংঘের মতে, অভ্যুত্থানের পর থেকে জান্তা সারা দেশে স্কুল, হাসপাতাল ও শরণার্থী শিবিরে বোমা হামলা চালিয়েছে, কয়েক হাজার বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে এবং নির্যাতন, গণহত্যাসহ ব্যাপক নৃশংসতা চালিয়েছে। সম্প্রতি মানবাধিকার পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে।

বর্তমান পরিস্থিতিতে মিয়ানমারে পালানোর মতো জায়গাও বেশি নেই। মিয়ানমারের সবচেয়ে শক্তিশালী জাতিগত সশস্ত্র সংগঠন ইউনাইটেড ওয়া স্টেট আর্মি পরিচালিত একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে ৪০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। তবে বেশির ভাগ বাস্তুচ্যুত মানুষই আটকা পড়েছে।

এসব মানুষের কাছে সাহায্য পৌঁছানোও চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁয়িড়েছে। জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা ও অনেক আন্তর্জাতিক সংগঠন শান রাজ্যের বৃহত্তম শহর লাশিওতে নিজ নিজ কার্যালয়ে আটকা পড়েছেন বলে নাম প্রকাশ না করে একটি সূত্র জানিয়েছে। পরিস্থিতির কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায়ও অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা প্রয়োজনীয় সাহায্য পৌঁছাতে পারছে না।

সূত্র : আলজাজিরা/ কালেরকন্ঠ

পাঠকের মতামত

রোহিঙ্গাদের ৩০ মিলিয়ন ডলারের বেশি সহায়তা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য জনসংখ্যা, শরণার্থী ও অভিবাসন বিভাগ এবং ইউএসএআইডিয়ের মাধ্যমে কক্সবাজার, ভাসানচর এ অঞ্চলের ...

যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে স্থায়ী যুদ্ধবিরতিসহ তিনটি শর্ত হামাসের

মিশর ও কাতারের মধ্যস্থত গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস তিনটি ধাপ অন্তর্ভুক্ত করতে ...